বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৮ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের পৌর এলাকায় অবস্থিত সাগর দিঘীটি ময়লা-আবর্জনা, দখল আর দূষণে হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। একসময় ভোরের আলোয় যে দিঘীর জলে দেখা যেত ঝিকিমিকি আলোর স্ফুরণ, যে দিঘীর জলে ভেসে উঠত পূর্ণিমার চাঁদের রুপালী আলো, কালের পরিক্রমায় সে দিঘীর জল আজ কালো, জলে জঞ্জাল আর দুর্গন্ধ। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে শ্রীমঙ্গল শহরের শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যটি।
মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিঘীর দুইপাড় জুড়ে হাট বসিয়ে চলছে গবাদিপশু বেচাকেনা, একপাশে পৌরসভা কর্তৃক নির্মিত মাছের পাইকারি ব্যবসার ত্রিতলা আড়ত। অন্যপাশে বাঁশ বিক্রির হাট, আরেক পাশ ঘন লতা-পাতায় বেষ্টিত। এক কোণে বসানো হয়েছে সাবমারসিবল পাম্প ও পানি উত্তোলন কাজের জন্য ঘর, এর চার কদম দুরেই পাবলিক টয়লেট।
দিঘীর চারপাশে রয়েছে বাঁধানো সিঁড়ি, যা সংস্কারের অভাবে ভেঙে পরেছে। সকালে মাছের পাইকারি বিক্রির সময়টাতে ভিড় লেগে থাকে এর এক পাড়ে, ব্যবহৃত পানি পুনরায় গড়িয়ে পড়ছে দিঘীতে, দুপুর গড়াতেই দেখা যায় গাড়ি ধৌত করা হচ্ছে দিঘীর পাড়ে আর পানি চুইয়ে মিশছে দিঘিতে। স্থানীয় শিশু কিশোর থেকে শুরু করে শ্রমজীবী মানুষেরা মধ্যদুপুর থেকেই গোসলের জন্য ভিড় করছেন। কেউ কেউ আক্ষেপ করছেন পানির দুরবস্থা দেখে।
দিঘীতে গোসল করতে আসা ছালেক মিয়া বললেন, “দিন দিন এ ঘাটের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে, পানি দুষিত হচ্ছে বিভিন্ন কারণে। প্রাকৃতিক কোন কারণ নয়, বরং মনুষ্যসৃষ্ট কারণে এ দিঘীর পানি আজ ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। দিঘীর পানিতে থাকা ময়লা ও দিঘীর পানি শোধনে কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।”
স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, “শ্রীমঙ্গলের এ ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার জন্য এর পানিশোধন, পুনঃখনন এবং সৌন্দর্য বর্ধনে পর্যাপ্ত বাতিসহ শ্রীমঙ্গলবাসীর বৈকালিক অবসর সময় কাটানোর জন্য সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া সময়ের দাবী। পৌর কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে সচেতনভাবে কাজ করতে হবে আর তা করতে পারলেই শহরের মধ্যেই বিনোদনকেন্দ্র পাবে এলাকাবাসী।”
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা মিথুন বলেন, “শহরে কোথাও কোন অগ্নিকান্ড ঘটলে পানির একমাত্র আধার হিসেবে সাগর দিঘীকে ব্যবহার করা হয় কিন্তু প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে ও আশপাশের ময়লা আবর্জনার কারণে দিঘীটি ক্রমশ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।”
তিনি আরো বলেন, হাটবারে এখানে বসে গবাদিপশুর হাট। দিঘীর জলেই চলে ধৌতকরণ, ফলে এ দিঘী হারাচ্ছে নিজস্ব স্বকীয়তা। মাছ উৎপাদনেও নেই কোন উদ্যোগ এ অবস্থায় জনগণ বলছেন এ দিঘীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরূপে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতি জরুরী।”
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. করিম মিয়া এই প্রতিবেদককে উল্টো প্রশ্ন করেন সাগর দিঘীর পানি কি আসলেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে? সাগর দিঘী সম্পর্কে তাকে বিস্তারিত বলার পর তিনি বলেন, “মেয়র মহসীন মিয়া শ্রীমঙ্গলের বাহিরে। আমরা সাগর দিঘীর পানি সহ শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সকল নাগরিক সমস্যা নিয়ে তার সাথে বসে সিদ্ধান্ত নেব।”